পদার্থের অবস্থা ও চাপ
পদার্থের তিনটি অবস্থা, কঠিন, তরল ও বায়বীয় এর সাথে আমরা মূলত পরিচিত। তবে এগুলো ছাড়াও পদার্থের আরেকটি অবস্থা রয়েছে, যাকে প্লাজমা বলে। এটিকে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বলে। এদের মধ্যে তরল ও বায়বীয়কে তাদের প্রবাহী ধর্মের জন্য প্রবাহী বলা হয়।
চাপ
মনে কর, একটি বড় পাথরকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাচ্ছো। চলো দুইভাবে আমরা অবস্থা বিবেচনা করি। প্রথম ক্ষেত্রে তুমি তোমার একটি হাত দিয়ে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তুমি তোমার দুই হাত দিয়ে পাথরকে ধাক্কা দিচ্ছ। এখন একটু ভাবো যে উভয়ক্ষেত্রে প্রযুক্ত বল সমান হলে দুইক্ষেত্রে চাপের মান কি একই হবে কি না।তার আগে চলো চাপ সম্পর্কে জেনে নিই।
কোন তলের একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে প্রযুক্ত বলই হচ্ছে চাপ।
কোন তলের ক্ষেত্রফল, A ও প্রযুক্ত বল, F হলে,
চাপ, P = F / A
তাহলে এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, দ্বিতীয়ক্ষেত্রে দুই হাত দিয়ে বল প্রয়োগ করায় প্রথমক্ষেত্রের চেয়ে মোট ক্ষেত্রফলের মান বেশি হবে এবং বল সমান থাকায় দ্বিতীয়ক্ষেত্রে চাপের মান কম হবে।
বল ভেক্টর রাশি হলেও চাপ কিন্তু স্কেলার রাশি।
একটি গ্লাসে কানায় কানায় পূর্ণ করে জল নাও। এবার একটি চিকন সুতো দিয়ে একটি পাথর বেধে গ্লাসের জলেতে ডুবাও। দেখবে কিছু জল গ্লাস থেকে পড়ে যাবে এবং একটু খেয়াল করলে দেখবে যে পাথরটিকে আগের চেয়ে হালকা মনে হবে।
এবার একটু ভেবে দেখো তো এক্ষেত্রে আসলে কি ঘটেছে?
তুমি যখন পাথরটিকে জলেতে ডুবাচ্ছ তখন কিছুটা জল পড়ে যায়, এ জলের পরিমাণ হচ্ছে ঐ পাথর যতটুকু জায়গা দখল করছে ততটুকু এবং পাথরটি হালকা হয়ে যাওয়া বা যতটুকু ওজন হারাবে তার মান হবে ঐ পাথরটি দ্বারা অপসারিত জলের ওজনের সমান।
কোন বস্তুকে তরলে ডোবালে তা ভাসবে নাকি ডুবে যাবে নাকি যেখানে আছে সেখানেই থাকবে তা কিভাবে বের করা যায় এবার আমরা তা শিখব।
কোন বস্তুকে তরলে ডোবানো হলে প্লবতার কারণে বস্তুটি তার দ্বারা অপসারিত বা সরানো জলের ওজনের সমান বল উপরের দিকে অনুভব করে। এই বলের উপরই নির্ভর করে ঐ বস্তুটি ভাসবে নাকি ডুবে যাবে নাকি যেখানে আছে সেখানেই থাকবে।
তরলের প্লবতার উপর নির্ভর করে বস্তু ভ্সবে না কি ডুবে যাবে।
প্যাসকেলের সুত্র
“কোন আবদ্ধ পাত্র তরল বা বায়বীয় পদার্থে বাইরে থেকে চাপ দেয়া হলে, সেই চাপ সমানভাবে সঞ্চালিত হয়ে পাত্রের সংলগ্ন গায়ে লম্বভাবে কাজ করে”
আগেই বলা হয়েছে যে তরলে চাপ দিলে তা চারিদিকে সমানভাবে সঞ্চালিত হয়। এবার উপরের চিত্রটি খেয়াল করে দেখ। দেখে কিছু বুঝতে পারছ কি?
উপরের চিত্রে যদি দুটি পিস্টনের কোনটিতে যদি চাপ দেয়া হয়,তবে কি হবে ভেবে দেখ তো। যদি ছোট পিস্টনে চাপ দেয়া হয়, তবে সে চাপ সমানভাবে নিচের দিকে সঞ্চালিত হবে এবং তা থেকে তরল সঞ্চালিত হবে। তরল সঞ্চালিত হওয়ায় অপরপাশের পিস্টনে উপরের দিকে বল কাজ করবে এবং তা উপরের দিকে উঠে যাবে।
প্যাসকেলের এ সূত্রটি ব্যবহার করে কিছু চমৎকার যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে।পাশে দেখানো ছবিটি ঠিক তেমনই একটি যন্ত্র। এটি ব্যবহার করে বল বৃদ্ধি করা যায়, অর্থাৎ তুমি একপ্রান্ত্রে যত পরিমাণ বল প্রয়োগ করবে, অপরপ্রান্তে তারচেয়ে বেশি বল পাবে।
বাতাসেরচাপ
বাতাসের একটা চাপ আছে। আমরা এই চাপ আলাদাভাবে অনুভব করিনা কারণ, আমাদের শরীরের ভেতর থেকেও বাইরে একটা চাপ আছে। পৃথিবী পৃষ্ঠে বাতাসের এই চাপ 10⁵N/m⁻² যার অর্থ হচ্ছে পৃথিবী পৃষ্ঠে 1m⁻² ক্ষেত্রফলের খানিকটা জায়গা কল্পনা করে নিলে তার উপর বাতাসের যে স্তম্ভটি রয়েছে তার ওজন 10⁵ N, এটা মোটামুটিভাবে একটা হাতির সমান।
ওজন হচ্ছে বল এবং এটি নিচের দিকে কাজ করে। বল ভেক্টর তাই এর মান ও দিক আছে। পাতলা টিন বা,আ্যলুমিনিয়ামের তৈরি কোনো নিশ্ছিদ্র টিন বা কৌটা যদি কোনোভাবে বায়ুশূন্য করা যায় তাহলে সেটা দুমড়েমুচড়ে যাবে। কারণ, স্বাভাবিক অবস্থায় বাইরের বাতাসের চাপকে কৌটার ভেতরের বাতাসের পালটা চাপ দিয়ে সমতা বজায় রেখেছিলো।
টরিসেলির পরিক্ষা
পারদ মুখে নেওয়ার মতো তরল নয় কিন্তু যুক্তির খাতিরে কল্পনা করে নেয়া যাক যে,স্ট্র দিয়ে পারদ চুমুক দিয়ে মুখে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি স্ট্রটি 76cm এর বেশি হয় তাহলে দেখা যাবে,পারদ 76cm উচ্চতায় এসে থেমে গেছে।পানির ঘনত্ব পারদের চেয়ে 13.6 গুণ বেশি,তাই পানি যেটুকু উচ্চতায় উঠেছে পারদ উঠেছে তার থেকে 13.6 গুণ।
পারদ ব্যবহার করে চাপের এই পরিক্ষাটি বিজ্ঞানী টরিসেলি করেছিলেন 1643 সালে।তিনি অবশ্য মুখ দিয়ে পারদকে একটি নল বেয়ে টেনে তোলার চেষ্টা করেননি,তিনি এক মুখ বন্ধ একটা নলের ভেতর পারদ ভরে, নলটি পারদ ভরা একটা পাত্রে উলটো করে রেখেছিলেন। পারদের উচ্চতা নামতে নামতে ঠিক 76 cm এ এসে থেমে যায়।
বাতাসের চাপ মাপার যন্ত্রের নাম ব্যারোমিটার এবং টরিসেলির এই পদ্ধতি দিয়ে তৈরি ব্যারোমিটারে এখনো বাতাসের চাপ মাপা হয়। বাতাসের চাপ বারলে পারদের উচ্চতা 76cm থেকে বেশি হয়, চাপ কমলে উচ্চতা 76cm থেকে কমে যায়
কঠিন, তরল ও গ্যাস
কোনো পদার্থে তার অণুগুলো কিভাবে আছে তার উপর নির্ভর করে সেটি কঠিন, তরল নাকি গ্যাস। এর সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হচ্ছে পানি।
কোনো পদার্থ গ্যাস অবস্থায় থাকলে তখন তার অণুগুলো থাকে মুক্ত অবস্থায়,একটি থেকে অন্যটির মাঝে দূরত্ব অনেক বেশি। যখন তরল অবস্থায় থাকে তখন তুলনামূলকভাবে একটির সাপেক্ষে অন্যটি নড়তে পারে। কঠিন অবস্থায় অণুগূলো কাছাকাছি থাকে কিন্তু একটি অণু অন্য অণুর সাপেক্ষে নড়তে পারে না।
প্লাজমা অবস্থা
কঠিন,তরল এবং গ্যাস এই তিনটি ভিন্ন অবস্থার বাইরেও চতুর্থ আরেকটি অবস্থা হতে পারে, সেটি হচ্ছে প্লাজমা। আমরা জানি, অণু কিংবা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যে কয়টি পজিটিভ চার্জের প্রোটন থাকে তার বাইরের ঠিক সেই কয়টি নেগেটিভ চার্জের ইলেকট্রন থাকে। সে কারণে একটা অণু কিংবা পরমাণুর চার্জ শূন্য।প্রচণ্ড তাপ দিয়ে গ্যাসকে প্লাজমা করা যায়, শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র প্রয়োগ করেও প্লাজমা করা যায়। টিউবলাইটে প্লাজমা তৈরি হয়, নিউন লাইটেও প্লাজমা তৈরি হয়। বজ্রপাত হলে বিজলির আলো হচ্ছে প্লাজমা আবার দূর নক্ষত্রের মাঝের পদার্থ হচ্ছে প্লাজমা।
No comments:
Post a Comment